Search
Close this search box.

আজ বাবরি মসজিদ শহীদ দিবস: মুসলিম ইতিহাসের এক কলঙ্কিত অধ্যায়

আজ ৬ ডিসেম্বর, বাবরি মসজিদ শহীদ দিবস। এ দিনটি ভারতের মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য এক শোকাবহ স্মৃতি বহন করে, যা তাদের ধর্মীয় ও ঐতিহাসিক ঐতিহ্যের উপর নৃশংস আঘাতের প্রতীক। ১৯৯২ সালের এই দিনে, উগ্র হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠীর হাতে বাবরি মসজিদ ধ্বংস হয়। এটি শুধু একটি মসজিদের ধ্বংস নয়, বরং ভারতের সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়ের হাজার বছরের ইতিহাস ও ঐতিহ্য ধূলিসাৎ করার এক নির্মম উদাহরণ।

 

১৫২৮ সালে মুঘল সম্রাট বাবরের সেনাপতি মীর বাকি কর্তৃক নির্মিত বাবরি মসজিদ ছিল ভারতীয় ইসলামিক স্থাপত্যের এক উল্লেখযোগ্য নিদর্শন। কয়েক শতাব্দী ধরে এটি শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় উপাসনালয় ছিল না, বরং অযোধ্যার মুসলিম সম্প্রদায়ের ধর্মীয় ও সামাজিক জীবনের একটি কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে কাজ করত। কিন্তু ১৯৪৯ সালে এই মসজিদের ভিতরে কথিতভাবে রামচন্দ্রের মূর্তি স্থাপন করা হয়, যা হিন্দু-মুসলিম সাম্প্রদায়িক বিরোধের সূত্রপাত ঘটায়।

 

এরপর থেকে বাবরি মসজিদ একটি রাজনৈতিক ইস্যুতে পরিণত হয়। ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর, শত শত উগ্রবাদী হিন্দুত্ববাদী কর্মী সংগঠিতভাবে মসজিদটি ধ্বংস করে ফেলে। ধ্বংসযজ্ঞের এই ঘটনা কেবল ভারতের ধর্মীয় সম্প্রীতির উপর আঘাত হানে না, বরং এটি বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশার জন্ম দেয়।

 

বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পর থেকে ভারতের সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায় ক্রমাগত নির্যাতন ও বৈষম্যের শিকার হয়েছে। মসজিদ ধ্বংসের পর দেশব্যাপী সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা শুরু হয়, যেখানে হাজার হাজার নিরীহ মানুষ প্রাণ হারায়। মসজিদ ধ্বংসের মাধ্যমে শুধু একটি ধর্মীয় স্থাপনা ধ্বংস হয়নি, বরং সংখ্যালঘুদের আত্মপরিচয়, ইতিহাস এবং ঐতিহ্যের উপর নির্মম আঘাত হানা হয়েছে।

 

বাবরি মসজিদের ঘটনা ভারতের সংখ্যালঘু মুসলিমদের উপর চলমান নিপীড়নের ধারাবাহিকতার একটি প্রতীক। মুসলিমদের ধর্মীয় স্থান, ব্যবসা-বাণিজ্য, এবং শিক্ষার অধিকার বারবার সংকুচিত করা হয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারতে মুসলিমদের উপর হামলা, মব লিঞ্চিং, এবং বৈষম্যমূলক আইন প্রণয়ন আরও বাড়িয়েছে। এই ঘটনাগুলো ভারতের ধর্মনিরপেক্ষতা ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে।

 

আজ বাবরি মসজিদ শহীদ দিবসে আমরা স্মরণ করি সেই নির্মম ইতিহাস, যেখানে একটি ঐতিহাসিক স্থাপনার ধ্বংসের মধ্য দিয়ে একটি সম্প্রদায়কে কোণঠাসা করার চেষ্টা করা হয়েছিল। এটি শুধু মুসলিমদের নয়, বরং ভারতের ইতিহাসের জন্যও একটি কলঙ্কজনক অধ্যায়। বাবরি মসজিদের ধ্বংস আমাদের মনে করিয়ে দেয়, ধর্মীয় সহিষ্ণুতা ও সম্প্রীতি বজায় রাখতে আমাদের কতটা সচেতন ও প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতে হবে।