
গভীর ভাবাবেগপূর্ণ পরিবেশে দেশের কল্যাণ, নিরাপত্তা, মুক্তি ও শান্তি কামনার মধ্য দিয়ে মঙ্গলবার শেষ হয়েছে শুরায়ে নেজামের ৫ দিনব্যাপী জোড় ইজতেমা। আখেরি মোনাজাতে ‘আমিন, আল্লাহুম্মা আমিন’ ধ্বনিতে আকাশ-বাতাস মুখরিত হয়ে ওঠে। দেশ-বিদেশ থেকে আগত লাখো ধর্মপ্রাণ মুসল্লি মহান আল্লাহর দরবারে করুণা, ক্ষমা এবং রহমত প্রার্থনা করেন।
আখেরি মোনাজাত
সকাল ৯টা ০৫ মিনিটে শুরু হয়ে ৯টা ২০ মিনিট পর্যন্ত দীর্ঘ ১৫ মিনিট স্থায়ী আবেগঘন এই মোনাজাত পরিচালনা করেন বিশ্ব ইজতেমার শীর্ষ মুরুব্বি মাওলানা ইব্রাহিম দেওলা। এর আগে উপস্থিত মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে হেদায়েতি বয়ান পেশ করেন ভারতের (বোম্বে) মাওলানা আব্দুর রহমান।
মোনাজাতে ধনী-গরিব, তরুণ-বৃদ্ধ, নেতা-কর্মী নির্বিশেষে সকল শ্রেণির মানুষ আল্লাহর কাছে নিজেদের কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন। তারা আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ও করুণার প্রশংসা করে তাঁর কাছে দেশ ও জাতির মুক্তি, সমৃদ্ধি এবং বিশ্বশান্তি কামনা করেন। মোনাজাত শেষে মুসল্লিদের চোখে-মুখে এক অনাবিল প্রশান্তি লক্ষ্য করা যায়।
বিশাল উপস্থিতি
আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে তাবলীগের সাথীদের পাশাপাশি ঢাকা, গাজীপুর, টঙ্গী, আশুলিয়াসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকার কয়েক লাখ ধর্মপ্রাণ মানুষ ভোর থেকেই ইজতেমা ময়দানে জড়ো হন। তাদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে ময়দান লোকে লোকারণ্য হয়ে ওঠে। সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় এত বড় জনসমাবেশ নির্ঝঞ্ঝাটভাবে সম্পন্ন হওয়ায় আয়োজক কমিটির শীর্ষ নেতারা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় প্রশাসনের ভূমিকা
ইজতেমা সুন্দরভাবে সম্পন্ন করতে প্রশাসন, পুলিশ, র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নজরদারি ছিল চোখে পড়ার মতো। ময়দান ও আশপাশ এলাকায় স্থাপন করা হয়েছিল ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা। তাছাড়া ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়। ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায়ও ছিল বিশেষ নজরদারি, যাতে ইজতেমা চলাকালীন যানজটের মতো সমস্যা না হয়।
আয়োজক কমিটির সন্তোষ প্রকাশ
শুরায়ে নেজামের ইজতেমা আয়োজক কমিটির শীর্ষ মুরুব্বি প্রকৌশলী মাহফুজ হান্নান ইজতেমা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হওয়ায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, প্রশাসন এবং সংশ্লিষ্ট সকলকে মোবারকবাদ জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “এই ইজতেমা ছিল মুসলিম উম্মাহর ঐক্য এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। আগামী ৩১ জানুয়ারি থেকে শুরু হবে শুরায়ে নেজামের বিশ্ব ইজতেমা, যা শেষ হবে ২ ফেব্রুয়ারি। আশা করছি, বিশ্ব ইজতেমাতেও এমনই সুন্দর পরিবেশ বজায় থাকবে।”
আগামী বিশ্ব ইজতেমার প্রস্তুতি
আগামী বছরের বিশ্ব ইজতেমার জন্য ইতোমধ্যেই প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। আয়োজক কমিটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বিশ্ব ইজতেমার ময়দান প্রস্তুতির কাজ ধাপে ধাপে এগিয়ে চলছে। আগামী ইজতেমায় মুসল্লিদের জন্য আরও আধুনিক সুবিধা নিশ্চিত করতে কাজ করছে আয়োজক কমিটি।
শুরায়ে নেজামের জোড় ইজতেমা শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হওয়া শুধু আয়োজকদের জন্য নয়, অংশগ্রহণকারী লাখো মুসল্লির জন্যও এক বিশাল সাফল্য। ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যে পূর্ণ এই আয়োজন দেশের ধর্মপ্রাণ মানুষদের মনে এক নবজাগরণ সৃষ্টি করেছে।