ফ্রান্সের পার্লামেন্টে অনাস্থা ভোটে ক্ষমতাসীন সরকারের পতন হয়েছে, যার ফলে প্রধানমন্ত্রী মিশেল বার্নিয়েকে মাত্র তিন মাসের মাথায় সরকারপ্রধানের দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়াতে হচ্ছে। বুধবার (৪ ডিসেম্বর) অনুষ্ঠিত এই ভোটে ৩৩১ জন আইনপ্রণেতা অনাস্থার পক্ষে রায় দেন।
রাজনৈতিক অচলাবস্থা এবং বাজেট পাসে দীর্ঘদিনের সংকটের মধ্যেই বার্নিয়ের সরকার চাপে ছিল। বাজেট ঘাটতির সমাধান করতে ব্যর্থ হওয়ায় উগ্র ডানপন্থী এবং বামপন্থী বিরোধী দলগুলো একত্র হয়ে অনাস্থা প্রস্তাব তোলেন। প্রস্তাবটি সংখ্যাগরিষ্ঠতায় পাস হয়, যা ইউরোপীয় ইউনিয়নের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ ফ্রান্সকে আরও গভীর রাজনৈতিক সংকটের দিকে ঠেলে দিয়েছে।
অনাস্থা ভোটে হেরে যাওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী বার্নিয়ে তার পদত্যাগপত্র প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর কাছে জমা দেবেন বলে জানা গেছে। গণমাধ্যমের তথ্যমতে, তিনি বৃহস্পতিবার সকালে আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগ করবেন। এটি ১৯৫৮ সালে পঞ্চম প্রজাতন্ত্র শুরুর পর থেকে ফ্রান্সের ইতিহাসে সবচেয়ে কম সময়ের সরকার হিসেবে চিহ্নিত হবে।
সংসদে দেওয়া বক্তব্যে বার্নিয়ে বলেন, “বাজেট ঘাটতির এই বাস্তবতা কোনো অনাস্থা প্রস্তাবের মাধ্যমে অদৃশ্য হবে না। এটি পরবর্তী সরকারগুলোর জন্যও সমান চ্যালেঞ্জ হয়ে থাকবে।”
১৯৬২ সালের পর এবারই প্রথম কোনো ফরাসি সরকার অনাস্থা ভোটে পরাজিত হলো। গত জুন মাসে প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁর ডাকা আগাম নির্বাচন থেকেই রাজনৈতিক অচলাবস্থার শুরু হয়। তখন থেকে পার্লামেন্ট ঝুলন্ত অবস্থায় রয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে ফ্রান্স আনবোয়েড (এলএফআই) দলের বামপন্থীরা প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁর পদত্যাগ দাবি করেছে। অন্যদিকে, উগ্র ডানপন্থী নেতা মেরিন লে পেনের ন্যাশনাল র্যালি দল বার্নিয়ের পতনে উল্লাস প্রকাশ করেছে। মেরিন লে পেন জানান, “প্রেসিডেন্টের ওপর চাপ ধীরে ধীরে বাড়বে, তবে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত তারই নিতে হবে।”
এমন পরিস্থিতিতে দেশটির আইনের কার্যক্রম এবং বাজেট ঘাটতির সমাধান নিয়ে অনিশ্চয়তা বাড়ছে। জাতীয় সংকট মোকাবিলায় বৃহস্পতিবার জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ।