পশ্চিম আফ্রিকার দেশ গিনির দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর এনজেরেকোরেতে ফুটবল ম্যাচকে কেন্দ্র করে ভয়াবহ সংঘর্ষে অন্তত ১০০ জন নিহত হয়েছেন। স্থানীয় সময় রোববার (১ ডিসেম্বর) এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। স্থানীয় হাসপাতালের চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, হাসপাতালে এবং আশপাশের এলাকাগুলোতে এখনো মরদেহ ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে।
রেফারির সিদ্ধান্ত থেকে সংঘর্ষ
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ম্যাচ চলাকালে রেফারির একটি বিতর্কিত সিদ্ধান্তে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। দুই দলের সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা দ্রুত সংঘর্ষে রূপ নেয়। তারা মাঠে ঢুকে পড়লে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। স্টেডিয়ামজুড়ে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় বাসিন্দারাও এতে জড়িয়ে পড়ে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, স্টেডিয়ামের বাইরে বিশৃঙ্খল দৃশ্য। রাস্তায় মানুষ ছুটোছুটি করছে, কেউ মাটিতে পড়ে রয়েছে। যদিও ভিডিওতে মৃত বা আহত ব্যক্তিদের সঠিক সংখ্যা নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি।
চিকিৎসা সেবার সংকট
এনজেরেকোরে স্থানীয় হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানান, মৃতদেহ হাসপাতালের মর্গ ছাড়িয়ে করিডোরে পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের এক চিকিৎসক বলেন, "মর্গে জায়গা নেই। করিডোরেও লাশ পড়ে আছে।" যদিও তিনি নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি।
রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও সংঘর্ষের প্রভাব
সংঘর্ষের শিকার এই ম্যাচটি সামরিক শাসক কর্নেল মামাদি দুম্বুয়ার সম্মানে আয়োজিত টুর্নামেন্টের অংশ ছিল। ২০২১ সালে এক সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলকারী দুম্বুয়া বর্তমানে আসন্ন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রার্থিতা করার কথা ভাবছেন।
সাম্প্রতিক সময়ে গিনিতে এ ধরনের টুর্নামেন্ট অনেক বেড়ে গেছে, যা রাজনীতির সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। রাজনৈতিক ক্ষমতা বাড়াতে এ ধরনের ইভেন্টগুলো ব্যবহৃত হচ্ছে বলে ধারণা করা হয়।
শহরজুড়ে শোকের ছায়া
গিনির এনজেরেকোরে শহরটি দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত এবং রাজধানী কোনাক্রি থেকে প্রায় ৫৭০ কিলোমিটার দূরে। শহরটিতে প্রায় ২ লাখ মানুষের বসবাস। সংঘর্ষের এই ঘটনায় পুরো শহর শোকে স্তব্ধ হয়ে গেছে।
এই মর্মান্তিক ঘটনার পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রশাসন কী ব্যবস্থা নেবে, তা নিয়ে জনগণের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। এ ঘটনায় নিহতদের পরিবার শোকাহত এবং পুরো দেশজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।