Search
Close this search box.

ওরা মাছের পোনা ‘মেরে’ বাঁচান নিজের জীবন

বাঁশখালীর সাগর উপকূল থেকে সংগ্রহ করা চিংড়ি পোনা যাচ্ছে দেশের নানা প্রান্তে। এতে প্রতিদিন আয় হচ্ছে কয়েক কোটি টাকা। স্কুল-মাদ্রাসা থেকে ঝরে পড়া শিশু-কিশোররা ভোরে ওঠে বঙ্গোপসাগরের অথৈই পানির সঙ্গে যুদ্ধ করে পোনা সংগ্রহ করে। তারা প্রতিদিন ৮০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ পর্যন্ত পোনা সংগ্রহ করতে পারে। অপরদিকে একটি চিংড়ি পোনা ধরতে গিয়ে এর পেছনে প্রায় ১০০ প্রজাতির মাছের পোনা নষ্ট হচ্ছে। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী মশারির নেট দিয়ে এসব চিংড়ি পোনা ধরছে। এভাবে চিংড়ি পোনা আহরণ করতে গিয়ে তারা অন্য প্রজাতির পোনা নিধন করছে। ফলে সাগরের মাছ প্রতিনিয়ত ধ্বংস হচ্ছে।
জানা যায়, ১০০ চিংড়ি পোনা ৩৫-৪০ টাকায় বিক্রি হয়। এতে শিশু-কিশোররা দৈনিক ৬০০ টাকা থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করে পিতার সংসারের বোঝা হালকা করছে। স্বামী পরিত্যক্তা, বিধবা মহিলা ও তাদের ছেলেমেয়েরা সংসারের অভাব মেটাতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এ চিংড়ি পোনা সংগ্রহ করছেন। অভাব-অনটন ও আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে উপকূলীয় এলাকার বহু শিশুকিশোর স্কুলমুখী না হয়ে এসব পেশায় জড়িয়ে সংসারের হাল ধরতে বাধ্য হচ্ছে।
স্থানীয়রা জানায়, বাঁশখালীতে দুই ধরনের চিংড়ি পোনা পাওয়া যায়। লবণাক্ত পানিতে বাগদা চিংড়ি এবং মিষ্টি পানিতে গলদা চিংড়ি। বাঁশখালীর ছনুয়া, সরল, গন্ডামারা, বাহারছড়া ও খানখানাবাদে পাওয়া যায় বাগদা চিংড়ির পোনা এবং পুকুরিয়া ও সাধনপুর এলাকায় শঙ্খ নদীতে পাওয়া যায় গলদা চিংড়ির পোনা।
সাগরে চিংড়ি পোনা আহরণ নিষিদ্ধ হলেও প্রচারণা, সচেতনতার অভাব ও আইন প্রয়োগ না থাকায় এসব তোয়াক্কা করছেন না উপকূলের লোকজন। একশ্রেণির অসাধু মহাজন অসহায় লোকজন ও শিশুকিশোরদের ব্যবহার করে অবাধে চিংড়ি পোনা আহরণ করে যাচ্ছে। উন্নতমানের হ্যাচারি না থাকায় বহু চিংড়ি পোনা মারা যায়। উপজেলার ছনুয়া, গন্ডামারা, সরল, বাহারছড়া ও খানখানাবাদ এলাকা থেকে প্রতিদিন চিংড়ি পোনা সংগ্রহ করে ওই পোনা দেশের বিভিন্ন স্থানে চালান হচ্ছে। অন্যদিকে সংগ্রহকারীরা তাদের পোনার ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না। মহাজনরা পোনা মারা যাওয়ার অজুহাত দেখিয়ে তাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত পোনা নিয়ে নিচ্ছেন। জানা গেছে, বাঁশখালীর উপকূলীয় ইউনিয়ন গন্ডামার, ছনুয়া, সরল, বাহারছড়া, খানখানাবাদ ও সাধনপুর এলাকায় শতাধিক মহাজন ডকের (পোনা জমা রাখার আধার) মাধ্যমে চিংড়ি পোনা সংরক্ষণ  করে পরে তা দেশের নানাপ্রান্তে পাঠান। এখানে হ্যাচারি না থাকায় সাগর থেকে সংগ্রহ করা কোটি কোটি চিংড়ি পোনা ডকে মজুত অবস্থায়ও মারা যায়।
অন্যদিকে যোগাযোগ ব্যাবস্থা নাজুক হওয়ায় বাঁশখালী থেকে পোনা মজুত করে ট্রাকের মাধ্যমে

তা দেশের বিভিন্নপ্রান্তে পাঠাতে গিয়েও ব্যাবসায়ীরা অনেক ক্ষেত্রে ক্ষতির সম্মুখীন হন। চিংড়ি পোনা ব্যাবসায়ী ফজল কাদের, আনছুর আলী ও রুহুল কাদের জানান, বাঁশখালীতে যদি চিংড়ি পোনার হ্যাচারি থাকত তাহলে একটি পোনাও মারা যেত না। পোনা সংগ্রহকারীরাও পেত ন্যায্যমূল্য।  বাঁশখালী উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন,  উপকূলীয় এলাকায় চিংড়ি পোনা সংগ্রহ আপাতত বন্দ রয়েছে। পোনা সংগ্রহ কালে বিভিন্ন প্রজাতির মৎস্য পোনা যাতে ধ্বংস না হয় সেজন্য আমরা সংগ্রহকারীদের প্রশিক্ষণের ব্যাবস্থা নিচ্ছি। বাঁশখালী থেকে সংগৃহীত পোনার ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তি ও সংরক্ষণের জন্য প্রশাসন সচেষ্ট রয়েছে।