দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইওল মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) গভীর রাতে আকস্মিকভাবে সামরিক আইন জারি করার পর দেশজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়ার মুখে তা প্রত্যাহার করতে বাধ্য হন। জাতির উদ্দেশ্যে টেলিভিশনে দেওয়া ভাষণে তিনি বলেন, “উত্তর কোরিয়ার কমিউনিস্ট শক্তির হুমকি থেকে উদার দক্ষিণ কোরিয়াকে রক্ষা এবং রাষ্ট্রবিরোধী উপাদান নির্মূল করতে জরুরি সামরিক আইন জারি করা হয়েছে।”
তবে প্রেসিডেন্টের এই সিদ্ধান্ত দেশটির সংসদে তীব্র বিক্ষোভ সৃষ্টি করে। আইনপ্রণেতারা প্রেসিডেন্টের পদক্ষেপের বিরুদ্ধে পার্লামেন্টে বিক্ষোভ করেন এবং তাকে গ্রেফতারের দাবিতে স্লোগান দেন। এমনকি সামরিক বাহিনী কিছু সময়ের জন্য পার্লামেন্ট ভবনে প্রবেশ করে এবং ভবনের ওপরে হেলিকপ্টার মোতায়েন করা হয়, যা পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করে তোলে।
এই ঘটনার পর গভীর রাতে পার্লামেন্টে জরুরি ভোটাভুটি হয়। ৩০০ সদস্যের মধ্যে ১৯০ জন সামরিক আইন জারির বিপক্ষে ভোট দেন। সংবিধান অনুযায়ী, সংসদের অর্ধেকের বেশি সদস্য চাইলে সামরিক আইন তুলে নেওয়া যায়। এরপর প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইওল পার্লামেন্টের অবস্থান মেনে নেওয়ার ঘোষণা দেন এবং মন্ত্রিসভার জরুরি বৈঠকের মাধ্যমে সামরিক আইন প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।
প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইওল ২০২২ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে বিতর্কিত সিদ্ধান্ত এবং তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে ওঠা কেলেঙ্কারির কারণে ক্রমাগত সমালোচনার মুখে রয়েছেন। সম্প্রতি বিরোধী দল ডেমোক্রেটিক পার্টির সঙ্গে বাজেট নিয়ে মতবিরোধ এবং সরকারের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে প্রতিবন্ধকতা তাকে আরও কোণঠাসা করে তুলেছে। বিরোধী দল তার মন্ত্রিসভার মন্ত্রীদের অভিসংশনের পথে এগিয়ে যাচ্ছে, যা তার অবস্থানকে আরও দুর্বল করে তুলেছে।
সামরিক আইন জারি এবং তা প্রত্যাহারের এই ঘটনা দক্ষিণ কোরিয়ার রাজনৈতিক অঙ্গনে বিরল এবং তা প্রেসিডেন্টের জনপ্রিয়তাকে আরও ক্ষুণ্ণ করবে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।