Search
Close this search box.

স্বাধীনতার পূর্ণতায় এবার বিজয় দিবসের ঐতিহাসিক উদযাপন

১৬ ডিসেম্বর, মহান বিজয় দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনটিতে পৃথিবীর মানচিত্রে উদ্ভাসিত হয় বাংলাদেশ নামে একটি নতুন স্বাধীন রাষ্ট্র। দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের পর রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের মাধ্যমে চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করে বাঙালি জাতি। লক্ষ প্রাণের আত্মত্যাগ, অগণিত নারীর ত্যাগ, অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধার বীরত্ব এবং গোটা জাতির সংগ্রামের ফসল এই বিজয়। দিনটি প্রতিটি বাঙালির জন্য গর্বের, আত্মমর্যাদার এবং চিরস্মরণীয়।

দীর্ঘ দেড় যুগ পর এবারের বিজয় দিবস একটি নতুন আঙ্গিকে উদযাপিত হচ্ছে। ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ একটি নতুন রাজনৈতিক অধ্যায়ে প্রবেশ করেছে। স্বাধীনতার দ্বিতীয় অর্ধশতাব্দীতে এসে এবার দেশের মানুষ দল-মত নির্বিশেষে সার্বজনীনভাবে বিজয় দিবস উদযাপন করছে। রাষ্ট্রীয় আনুষ্ঠানিকতা ও সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণে দিবসটি উদযাপনের প্রস্তুতি নিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।

এবারের বিজয় দিবসের কর্মসূচি শুরু হবে প্রত্যুষে ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে। সূর্যোদয়ের সাথে সাথে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। তাদের সঙ্গে থাকবেন বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের প্রতিনিধি এবং সাধারণ মানুষ।

সারাদেশে শহীদদের স্মরণে আয়োজন করা হয়েছে দোয়া ও বিশেষ প্রার্থনার। সরকারি ও বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, আলোকসজ্জা এবং বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের উদ্যোগে আলোচনা সভা, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক নাটক ও চলচ্চিত্র প্রদর্শনসহ নানা কর্মসূচি পালন করা হবে।

দেশের সব জেলা ও উপজেলায় আড়ম্বরপূর্ণ বিজয়মেলা অনুষ্ঠিত হবে। শিশুদের জন্য মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, রচনা প্রতিযোগিতা এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। ঢাকার বিভিন্ন স্থানে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত স্থানগুলোতে জনসাধারণের ভিড় দেখা যাবে।

বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা জানিয়ে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এক বার্তায় বলেছেন, “লাখো শহীদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার সুফল জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সহনশীলতা এবং শ্রদ্ধাবোধের সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে।”

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস তাঁর বার্তায় বলেছেন, “স্বাধীনতা শুধু একটি ভূখণ্ড নয়, এটি মানুষের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার। আমরা সবাই মিলে দেশের উন্নয়ন এবং স্বাধীনতার সুফল নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর।”

বিজয় দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান আলোকিত হবে। ঢাকার শিশু একাডেমি, শিল্পকলা একাডেমি এবং জাতীয় জাদুঘরে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে। দেশের সব হাসপাতাল, কারাগার, এতিমখানা এবং বৃদ্ধাশ্রমে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হবে। নৌবাহিনীর জাহাজগুলো দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।

বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশের দূতাবাসগুলোতেও বিজয় দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিরাও এদিনটি উদযাপন করবে।

বিজয় দিবস শুধু একটি তারিখ নয়, এটি একটি জাতির আত্মপরিচয়ের প্রতীক। এবারের বিজয় দিবস উদযাপনে যোগ হয়েছে নতুন এক অধ্যায়। দেশের মানুষ এখন একতা, সাম্য এবং সমৃদ্ধির পথে অগ্রসর হওয়ার নতুন প্রত্যয় নিয়ে বিজয় দিবস উদযাপন করছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে এই দিনটি জাতিকে এগিয়ে যাওয়ার শক্তি ও অনুপ্রেরণা জোগাবে।